ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের আগে কী কী বিধি নিষেধ মানা উচিত জেনে নিন।What should you try to do when using public WiFi?

বর্তমানে ডেটা কনজিউম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে তাই অনেকে মোবাইল ডেটা বাঁচানোর উদ্দেশে ফ্রি ওয়াইফাই কানেকশন পেলেই শুরু  হয়ে যাই। বিভিন্ন শপিং মল,রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম,হোটেল ,এয়ারপোর্ট অধিকাংশ জায়গায় ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ফ্রি ওয়াইফাই কতটা সুরক্ষিত ?এইসব ফ্রি নেটওয়ার্ক আপনার অজান্তে আপনার ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে না তো ?

অনেকেই যখন বাড়ির বাইরে যান মোবাইল ডেটা বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করেন। কিন্তু আপনার অজান্তেই আপনার ব্যাক্তিগত সব তথ্য হ্যাক হতে পারে ওই ফ্রি ওয়াইফাই এর দৌলতে। বর্তমানে ব্যাক্তিগত তথ্যের মূল্য কতটা সেটা আর আশাকরি বলতে হবে না। তাই ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের আগে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারেন।  তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করার আগে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

বর্তমানে বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার রয়েছে যা আপনার মোবাইল,লেপটপ কে বিভিন্ন ম্যালওয়্যার,ভাইরাস এর হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু বিভিন্ন সুরক্ষা প্রোটোকল থাকার সত্ত্বেও বিভিন্ন এপ্লিকেশন,ওয়েবসাইট ও লিংক এর মাধ্যমে আপনার ডিভাইস এ ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে।

এই সম্ভবনা আরো বাড়ে যখন আমরা ফ্রি  ওয়াই-ফাই ব্যবহার করি কোনোরকম নিরাপত্তা ছাড়াই।  আপনার ডিভাইসটি যেকোনো সময় ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস দ্বারা কোরাপ্ট হতে পারে যখন আপনি ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করছেন। আপনার ডিভাইস টি সম্পূর্ণ হ্যাক হয়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। এমন অনেক হ্যাকার আছে যারা আপনার অফলাইন তথ্য চুরি করতে সক্ষম। হ্যাকাররা আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনার ডিভাইস ব্যবহার করে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এই ধরণের দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে এন্টিভাইরাস ও আন্টি ম্যালওয়ার সফটওয়্যার   ব্যবহার করতে পারেন।

টাকাপয়সা আদানপ্রদান না করা

আপনি যতই সাবধানতা অবলম্বন করুন না কেনো ফ্রি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময়  ঝুঁকি থেকেই যায়। আর্থিক লেনদেন এর মতো সেনসেটিভ এক্টিভিটি ফ্রি ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট ব্যবহার করে না করাই ভালো।

সোশ্যাল মিডিয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট এর মতো কাজ ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে করা হলেও টাকা পয়সার লেনদেন এই ধরণের ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করে না করাই ভালো। ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করে কখনোই ডেবিট কার্ড ,ক্রেডিট কার্ড ও অনলাইন ব্যাঙ্কিং এর কাজ করবেন না। এই ধরণের ভুল আপনার পুরো ব্যাঙ্ক একাউন্ট খালি করে দিতে পারে।

আপনি যদি অনলাইন গেম খেলেন অথবা  ইউটিউবে  ভিডিও দেখেন তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি যদি অনলাইন কেনাকাটা করেন এবং ডেবিট ,ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন পেমেন্ট করেন সেক্ষেত্রে আপনার ঝুঁকি রয়েছে।

VPN ব্যবহার করুন

বপন এর পুরো অর্থ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। এটি ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনার ডেটাকে এনক্রিপ্ট করে। VPN ব্যবহার করে আপনি নিরাপদে ইন্টারনেট সার্ফ করতে পারেন এটি আপনার ব্যাক্তিগত ডেটাকে থার্ড পার্টির এক্সেস এর হাত থেকে রক্ষা করে। VPN  এর প্রধান কাজ হলো আপনার ip address লুকিয়ে রাখা অর্থাৎ ভিপিএন ব্যাবহারকারীর কারেন্ট লোকেশন ও আসল পরিচয় লুকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। তাই ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার সময় আপনারা VPN  ব্যবহার করতে পারেন।

সুরক্ষিত ওয়েবসাইটের ব্যবহার

ইন্টারনেট এ লক্ষ  লক্ষ  ওয়েবসাইট রয়েছে কিন্তু সমস্ত ওয়েবসাইট সুরক্ষিত নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কি করে  বুঝবেন কোন ওয়েবসাইট সুরক্ষিত এর কোনটি নয়। যেসব ওয়েবসাইট এর url  “http” দিয়ে  শুরু হয় সেই সব ওয়েব সাইট আপনার পক্ষে নিরাপদ নয়। তাই সর্বদা চেক করুন যে ইউআরএল  “https” দিয়ে যেন শুরু হয়। যেসব ওয়েবসাইট এর ইউআরএল https  দিয়ে শুরু হয় সেই সব ওয়েবসাইট এ আপনার ডেটা দিলে ইন্টারনেট প্রোভাইডার আপনার সেই ডেটা দেখতে পারবেনা।  তবে ওয়েবসাইট এর মালিক চাইলে তা দেখতে পারে। তাই কোনো অপরিচিত ওয়েবসাইট এ তথ্য প্রদান এর আগে এই বিষয়টি মাথায় রাখুন। 

ইন্টারনেট সার্ফিং এর সবথেকে প্রধান শর্ত হলো সুরক্ষিত ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করা। অপরিচিত ওয়েবসাইট এর লিংক এ প্রবেশ না করাই ভালো। কারণ ওই সব লিংক এ ভাইরাস থাকতে পারে যা আপনার দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।  তাই ফ্রি ইন্টারনেট ব্যাবহারে একটু অধিক সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত যাতে কোনো দুর্ঘটনার শিকার না হই। 

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার

আমাদের সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি সেটাই আমাদের একাউন্ট এর  নিরাপত্তা রক্ষা করে। বর্তমানে পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়া একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। তাই মোবাইল নম্বর বা নাম এর মতো দুর্বল পাসওয়ার্ড  না রেখে কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। আপনার একাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য আপনাকে দূর্ভেদ্য এবং শক্তিশালী পাসওর্য়াড ব্যবহার করা উচিত। 

সংখ্যা,বিভিন্ন স্পেশাল ক্যারেকটার , ছোট ও বড়ো হাতের এলফাবেট ব্যবহার করে একটি দূর্ভেদ্য পাসওয়ার্ড তৈরী করুন।এইভাবে আপনি পাসওয়ার্ড তৈরী করলে আপনার একাউন্ট হ্যাক করা বেশ কঠিন হয়ে পরবে। তবে যত গুলি সোশ্যাল একাউন্ট  ব্যবহার করবেন প্রতিটার জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাই শ্রেয়। এছাড়া সহজে অনুমান করা যায় এমন নাম বা সংখ্যা দিয়ে কোনো পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করাই ভালো। আপনি যদি বিভিন্ন জায়গার ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে কঠিন যা সহজে আন্দাজ করা না যায় সেই রকম  দূর্ভেদ্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।

FAQ.

প্রশ্ন: ফ্রি পাবলিক ওয়াইফাই কি মনিটর করা হয়?

উত্তর: হ্যাঁ, পাবলিক ওয়াইফাই বিভিন্নভাবে আপনাকে ট্র্যাক করতে পারে।

প্রশ্ন: পাবলিক ওয়াইফাই নেটফ্লিক্স দেখা কি সুরক্ষিত?

উত্তর: হ্যাঁ আপনি সাধারণ ওয়েব ব্রাউজিং এবং সিনেমা দেখার জন্য পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারেন। শুধু কোনরকম সেনসিটিভ কাজ না করলেই হল।

প্রশ্ন: পাবলিক ওয়াইফাই কি আমাদের সার্চ হিস্ট্রি ট্যাক করতে পারবে?

উত্তর: আপনি যদি পাবলিক ওয়াইফাই কানেক্ট থাকেন তাহলে আপনার সার্চ হিস্ট্রি মনিটর করা যাবে।

প্রশ্ন: পাবলিক ওয়াইফাই এর মালিক আমাদের ডিভাইসের কোন ফাইল কি ডিলিট করতে পারবে?

উত্তর: অবশ্যই, আপনি যদি সেই ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সঙ্গে কানেক্ট থাকেন।

প্রশ্ন: কেউ কি আমার ইনকগনিটো হিস্ট্রি চেক করতে পারবে?

উত্তর: আপনি যদি ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ব্রাউজিং হিস্ট্রি কুকিজ এবং সাইট ডাটা আপনার মোবাইলে সেভ হয় না সেই জন্য আপনার মোবাইল থেকে কেউ ব্রাউজিং হিস্ট্রি চেক করতে পারবে না।

Leave a Comment