Things to look for before buying a laptop in Bengali 2022|ল্যাপটপ কেনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই দেখে নেবেন।

বর্তমানে ল্যাপটপ আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এখন মার্কেটে বিভিন্ন মানের ও কনফিগারেশনের ল্যাপটপ রয়েছে। নানা ধরণের ফিচার, উন্নত প্রযুক্তি ও বহন করার সুবিধার জন্য ল্যাপটপ এখন খুবই জনপ্রিয়। এই কয়েক বছরের মধ্যে ল্যাপটপের নকশা ও প্রযুক্তিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে নিজের সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় ল্যাপটপ সিলেক্ট করে নেওয়াটা একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ল্যাপটপ কেনার সময় কিছু বিষয় যদি আপনারা খেয়াল রাখেন তাহলে আপনাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। যখন কেউ কাউকে প্রশ্ন করে যে কোন ল্যাপটপটি সব থেকে বেশি ভালো, তখন প্রায় কেওই এই প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারে না। মার্কেটে এখন নানা ধরণের ল্যাপটপ রয়েছে যা একটি আরেকটির থেকে মূল্যে এবং কনফিগারেশনে পুরোপুরি আলাদা।

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ল্যাপটপ কেনার আগে কোন কোন বিষয় গুলো আমাদের মাথায় রাখতে হবে –

ব্র্যান্ড

এখন মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ রয়েছে যেমন – এইচপি, ডেল, আসুস, লেনোভো, এসার ইত্যাদি। যদি আপনারা ভালো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে ডেল অথবা আসুস কিনতে পারেন। এই দুটি ব্র্যান্ড হলো ল্যাপটপ জগতের সব থেকে ভালো ব্র্যান্ড। এছাড়াও আপনি চাইলে এইচপিও কিনতে পারেন, কিন্তু আগের মতো এইচপির পারফরম্যান্স অতটা ভালো নেই, তবুও আপনারা যদি চান নিতে পারেন। আর যদি আপনারা মোটামোটি মানের ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে এসার অথবা লেনেভো নিতে পারেন। এই দুটি ব্র্যান্ডের পারফরম্যান্স খুবই ভালো। আর এই ল্যাপটপের মূল্য নির্ভর করবে আপনাদের কনফিগারেশনের ওপর।

সাইজ

আপনি কি ধরণের কাজের জন্য ল্যাপটপটি কিনছেন সেটার উপর ভিত্তি করেই আপনার ল্যাপটপের সাইজ ঠিক করতে হবে। আর আপনি যাতে ল্যাপটপটি বহন করেত পারেন সেই ভেবে ল্যাপটপ কেনেন সেক্ষেত্রে আপনার পক্ষে নোটবুক কেনাই শ্রেয় হবে। আপনি যখন নোটবুক কিনবেন তখন আপনাকে কিছু বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন ধরুন নোটবুকটির ওজন কত, এটি কতটা হালকা বা সরু সেই বিষয় গুলি খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও নোটবুকের মধ্যে অনেক নোটবুক রয়েছে যেগুলিকে আলট্রাবুক বলা হয়। এগুলো বহন করার জন্য খুবই ভালো। ল্যাপটপটির ওজন নির্ভর করে ল্যাপটপের স্ক্রিনের সাইজের উপর। ১১-১২ ইঞ্চি হলো সব থেকে সরু এবং হালকা। এর ওজন হলো ১.১-১.৫ কেজি। ব্যবহার করার জন্য এবং বহন করার জন্য ১৩-১৪ ইঞ্চির ল্যাপটপ সব থেকে ভালো। এর ওজন ১.৮ কেজির নিচে হয়ে থাকে।

যদি আপনারা ল্যাপটপটি বেশিরভাগ বাড়িতেই ইউস করতে চান আর মাঝেমধ্যে বাইরে নিয়ে যেতে চান তাহলে আপনাদের জন্য ১৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে বিশিষ্ট ল্যাপটপই ভালো হবে। এই রকম স্ক্রিন সাইজের ল্যাপটপ গুলোর ওজন মূলত ২.৫ কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়। এছাড়াও আপনারা যদি আরোও বোরো ডিসপ্লের ল্যাপটপ নিতে চান সেক্ষেত্রে আপনারা ১৭ – ১৮ ইঞ্চির ল্যাপটপ নিতে পারেন। 

স্ক্রিনের মান

যেহেতু আপনাকে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকতে হয় তাই আপনারা এমন ধরণের ল্যাপটপ কিনবেন যার স্ক্রিনের দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে কাজ করলে আপনার কোনো রকম অসুবিধা হবে না। স্ক্রিনের সম্পর্কে আরোও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে স্ক্রিনের রেজুলেশন কতটা তা ল্যাপটপ কেনার আগে দেখে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ১৯২০x১০৮০ পিক্সেল এর স্ক্রিন সব কাজের জন্য আদর্শ বলে মনে করা হয়ে থাকে। আপনারা যখন ল্যাপটপটি কিনবেন তখন অবশ্যই ল্যাপটপটি চালিয়ে দেখে নেবেন। যদি ল্যাপটপ স্ক্রিনের আলো ঠিকমতো প্রতিফলিত না হয় তাহলে সেটা যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যাবে না।

টাচস্ক্রিন 

আপনারা যদি স্ক্রিনটাচ করে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন তাহলে আপনারা টাচস্ক্রিন ল্যাপটপ নিতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যে উইন্ডোজ ৮ ইন্টারফেসের স্টাইল ও জেশ্চার আপনাদের টাচস্ক্রিন অভিজ্ঞতাকে আরোও বেশি উন্নত করবে এবং এটা আপনারা খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর ল্যাপটপ গুলোতে ওয়েব পেজ ইউস করা সহজ হয় এবং ডকুমেন্ট ও ছবি দেখতেও সুবিধা হয়। আপনারা টাচস্ক্রিন ল্যাপটপ গুলো কিবোর্ড ল্যাপটপ হিসাবেও ব্যবহার করতে পারবেন। আপনারা মার্কেটে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে একটি টাচস্ক্রিন ল্যাপটপ পেয়ে যাবেন। আপনারা যদি ছোটোখাটো কাজের জন্য ল্যাপটপ ব্যবহার করতে চান যেমন – ইন্টারনেট ব্যবহার করা, সিনেমা দেখা, গান শোনা ইত্যাদি এই সবের জন্য, তাহলে আপনাদের পক্ষে কম দামের ল্যাপটপ কেনাই ভালো হবে। এরজন্য আপনারা ১৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের মনিটর যুক্ত ল্যাপটপ কিনতে পারেন।

কিবোর্ড

আপনারা যে ধরণের কিবোর্ড ব্যবহার করতে সুবিধা বোধ করেন সেই ধরণেরই কিবোর্ড বিশিষ্ট ল্যাপটপ কিনবেন। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেবেন যে ল্যাপটপটিতে ব্যাকলাইট আছে কিনা। যদি ল্যাপটপটিতে ব্যাকলাইট থাকে তাহলে আপনারা অন্ধকারেও ল্যাপটপের বোতামগুলো দেখতে পাবেন। আজকাল তো মিডিয়াম মুল্যের ল্যাপটপের কিবোর্ড গুলিতেও লাইট থাকে।

সিপিইউ এবং গ্রাফিক্স

বর্তমানে মার্কেটে ইন্টেলের কোর আই সিরিজের প্রসেসর/CPU গুলো বেশি প্রচলিত কারণ এটি একই সময়ের মধ্যে একসঙ্গে নানা ধরণের কাজ করতে পারে। সব থেকে ভালো হলো কোর আই ৭ সিপিইউ যুক্ত ল্যাপটপ গুলো কেনা কারণ এটি ব্যবহার করার জন্য বেশ ভালো। যদি আপনাদের বাজেট মিডিয়াম হয় তাহলে আপনারা কোর আই ৫ বা কোর আই ৩ প্রসেসরের ল্যাপটপও কিনতে পারেন। আর গ্রাফিক্সের ক্ষেত্রে আপনারা যদি সচারচর থ্রিডি গ্রাফিক্সের কাজ না করেন, ভিডিও এডিটিং না করেন অথবা গেম না খেলেন তাহলে আপনারা গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপ দিয়েও কাজ চালাতে পারবেন। আর যদি আপনারা হাই-এন্ড গেমস খেলেন বা গ্রাফিক্সের কাজ করেন তাহলে আপনাদের গ্রাফিক্স চিপ এর প্রয়োজন হবে।

এক্ষেত্রে আপনারা মিডিয়াম বাজেটের মধ্যে হলে এনভিডিয়া জিটিএক্স  ১০৫০ থেকে শুরু করে উচ্চমূল্যের মধ্যে ১০৮০ অথবা আরোও উন্নত প্রযুক্তির কোনো গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপ কিনতে পারেন। এইজন্য আপনারা আসুসের গেমিং ল্যাপটপ আরওজি স্ট্রিক্স স্কার এডিশনও দেখতে পারেন। আর যদি আপনাদের বাজেট বেশি থাকে তাহলে আপনারা আসুস আরওজি জেফার্স নিতে পারেন কারণ এটি হাই-কনফিগ বা গেমিং ল্যাপটপ।

RAM

আপনারা যখন নতুন ল্যাপটপ কিনবেন তখন অবশ্যই ল্যাপটপের RAM এর দিকেও লক্ষ্য রাখবেন। আপনার যদি চান যে আপনাদের ল্যাপটপটি ভালো পারফরম্যান্স দেবে সেক্ষেত্রে আপনাদের ৪ জিবি বা তার বেশি RAM এর ল্যাপটপ কিনতে হবে। আর আপনারা যদি মনে করেন যে ল্যাপটপে গেমিং বা ভিডিও এডিটিং এর মতো কাজ করবেন তাহলে আপনাদের পক্ষে ৮ জিবি অথবা ১৬ জিবি RAM এর প্রয়োজন হবে। এছাড়াও RAM এর ক্ষেত্রে আপনাদের Double Data Rate এবং বাস স্পিডের দিকে নজর রাখতে হবে।

ব্যাটারি

আপনারা শুধুমাত্র বাড়িতে ব্যবহার করার জন্য যদি একটি বড় সাইজের ল্যাপটপ কেনেন তাহলে আপনাদের ব্যাটারি নিয়ে ভাবার বেশি প্রয়োজন হবে না। কিন্তু আপনারা যদি বাড়ির বাইরে ব্যবহার করার জন্য কোনো ল্যাপটপ কিনতে চান সেক্ষেত্রে আপনারা চেষ্টা করবেন এমন ধরণের ল্যাপটপ কেনার যাতে ৭ – ৮ ঘন্টার মতো ব্যাকআপ পাওয়া যাবে। আর হ্যা যখন আপনি ল্যাপটপটি কিনবেন কেনার সময় অবশ্যই ব্যাটারিতে থাকা রেটিং দেখে নেবেন। আর চেষ্টা করবেন 44Wh থেকে 50Wh এর মধ্যে থাকা ব্যাটারি বিশিষ্ট ল্যাপটপ গুলি কেনার। তাহলেই আপনি আপনার ল্যাপটপের ভালো পারফরম্যান্স পাবেন। আর এটা মাথায় রাখবেন যে ল্যাপটপের ব্যাটারি যত বড় হবে সেটা আপনার ব্যাবহারে জন্য ততো বেশি ভালো হবে।

হার্ডড্রাইভ

আপনারা যখন কোনো ল্যাপটপ কিনবেন তখন ল্যাপটপের হার্ডড্রাইভ বেশি দেখে কিনবেন যাতে পরবর্তীকালে আপনাদের কোনো প্রয়োজনীয় ফাইল সেভ করতে গেলে স্পেস কম না পরে। আপনারা 2 টেরাবাইটের হার্ডড্রাইভ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আর যদি সেটা না কিনতে পারেন তাহলে কমপক্ষে 1 টেরাবাইটের হার্ডড্রাইভ কিনবেন। সময়ের সাথে সাথে হার্ডডিস্ক স্লো হয়ে যেতে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনারা যদি আপনাদের বাজেটটা একটু বাড়াতে পারেন তাহলে হার্ডডিস্ক না নিয়ে এসএসডি স্টোরেজ নিয়ে নিতে পারেন। 250 GB এসএসডি স্টোরেজের দাম প্রায় ৫-৮ হাজার টাকার মতো ,যেখানে ১ টিবি হার্ডডিস্ক এর দাম পরবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মতো। মার্কেটে ৫২০০ RPM এবং ৭২০০ RPM (Revolution per minute) স্পিডের হার্ডডিস্ক পাওয়া যায়। ৭২০০ RPM ল্যাপটপের ভালো স্পিডের জন্য অপরিহার্য। তবে আপনারা যদি সাধারণ কিছু কাজের জন্য ল্যাপটপ নিতে চান তাহলে ৫২০০ RPM হার্ডডিস্ক হলেও হবে।

ব্লটুথ এবং ওয়্যারলেস কানেকশন

ল্যাপটপ কেনার সময় ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টরের ক্ষমতা দেখে কিনবেন যাতে নিরাপদ ভাবে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ইউজ করা যায়। ডুয়াল ব্রান্ডের যেসব অ্যাডাপ্টর গুলো পাওয়া যায় সেগুলো একটু বেশি ভালো হয়। বর্তমানে ব্লুটুথের ক্ষেত্রে মার্কেটে 4.o নির্ভরযোগ্য।

পোর্ট

USB 3 পোর্ট এর মাধ্যমে USB 2 এর তুলনায় দ্রুত গতিতে DATA ট্রান্সফার করা যায়। সেই জন্যই ল্যাপটপের পোর্টগুলো USB 3 কিনা তা দেখে নেবেন। এখন প্রায় বেশিরভাগ ল্যাপটপেই USB 2 এবং USB 3 পোর্ট থাকে। USB 2 এর তুলনায় USB 3 দশ গুণ দ্রুত DATA ট্রান্সফার করতে পারে। এর ফলে আপনাদের সময়ও কিছুটা কম লাগবে। আর যদি ল্যাপটপে USB 3.1 পোর্ট থাকে তাহলে তো আরোই ভালো হবে। এছাড়াও ল্যাপটপে অন্য কোনো প্রয়োজনীয় পোর্ট আছে কিনা তা অবশ্যই যাচাই করে নেবেন।

অপারেটিং সিস্টেম

অনেক ব্যাক্তি আছে যারা অল্প কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য প্রি-লোডেড অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর ল্যাপটপ কিনে থাকেন। কিন্তু আপনারা যদি নিজের থেকে ওএস এবং অন্য কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল করতে যান তাহলে সেটা কঠিন হবে এবং সময়ও বেশি লাগবে। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় আপনারা যে ধরণের অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করতে সুবিধা বোধ করেন সেটাই ইন্সটল করবে। বর্তমানে মার্কেটে 10 হাজার থেকে শুরু করে 6 লক্ষ টাকা দামেরও ল্যাপটপ রয়েছে। আপনারা কেমন ল্যাপটপ কিনতে চান সেটা সম্পূর্ণই আপনার ওপরই নির্ভর করে। তাই আপনারা যখন নতুন ল্যাপটপ কিনবেন তখন উপরে যে বিষয় গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। তাহলেই আপনারা নিজের জন্য একটি সঠিক ল্যাপটপ কিনতে পারবেন। আর হ্যা আপনার সাধ্যের মধ্যে যে ল্যাপটপটির ফিচার সব থেকে বেশি ভালো রয়েছে চেষ্টা করবেন সেই ল্যাপটপটি নেওয়ার l

আপনার জন্য আরো

1.কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়।

2.উইন্ডোজ 10 এর চেয়ে উইন্ডোজ 11 যেসব ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে তা জেনে নিন

3.পুরাতন কম্পিউটার বা ল্যাপ্টপ কেনার আগে যা জানা প্রয়োজন

4.কিভাবে কম্পিউটারে সফটওয়্যার ছাড়াই ফাইল ও ফোল্ডার হাইড করবেন ?

Leave a Comment