সফটওয়্যার পাইরেসি কি? সফটওয়্যার পাইরেসি প্রতিরোধের উপায়|What is software piracy? Ways to Prevent software Piracy in Bengali 2022

কোন সফটওয়্যার যে ব্যক্তি বা কোম্পানি বানিয়েছে তার অনুমতি ছাড়া আপনি যদি তা নকল করেন অথবা কপি করে বিক্রি করেন তাহলে সেটাকে সফটওয়্যার পাইরেসি বলা হয়।

সফটওয়্যার পাইরেসির প্রকারভেদ

Table of Contents

সাধারণত পাঁচ রকমের সফটওয়্যার পাইরেসি হতে দেখা যায়। কিভাবে সাধারণ মানুষ এই পাইরেসির সাথে পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়ে সেটা এখানে বুঝতে পারবেন।

সফটলিফটিং

কেউ যদি একটি সফটওয়্যার কিনে সেটা একাধিক কম্পিউটারে ডাউনলোড করে ইনস্টল করে ব্যবহার করে এই ধরনের পাইরেসিকে সফটলিফটিং বলা হয়।

এই ধরনের পাইরেসি বিভিন্ন স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে করা হয়ে থাকে। যেহেতু সফটওয়্যার এর লাইসেন্সে  বলা থাকে যে একটি ডিভাইস ব্যবহার করার জন্য কিন্তু এখানে একাধিক ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তাই এটি একপ্রকার পাইরেসি বা চুরি। টাকা বাঁচানোর জন্যএই ধরনের কাজ  করা হয়ে থাকে।

ক্লায়েন্ট সার্ভার এর অতিরিক্ত ব্যবহার

ক্লায়েন্ট সার্ভার খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহার করাও এক ধরনের পাইরেসি।

একসঙ্গে একাধিক ইউজার যখন একই নেটওয়ার্ক কি একই প্রোগ্রাম এর ব্যবহার করে তখন এই ধরণের প্রাইভেসি ঘটতে পারে।

যখন কোন ব্যবসা একই লোকাল নেটওয়ার্কের অধীনে থাকে এবং সকলে একই সফটওয়্যার বারবার বিভিন্ন কম্পিউটার ব্যবহার করে তখন এই ধরণের পাইরেসি ঘটে।

আপনার লাইসেন্স যদি আপনাকে একাধিকবার ব্যবহারের অধিকার না দিয়ে থাকে তাহলেই এই পাইরেসি ঘটে।

হার্ডডিস্ক লোডিং

হার্ডডিক্স লোডিং হল একপ্রকার বাণিজ্যিক পাইরেসি।

এই পদ্ধতিতে কোন একজন ব্যক্তি একটি লিগাল সফটওয়্যার কিনে নেয় এবং হার্ডডিস্কে তার একাধিক কপি করেন এবং সেগুলিকে বেআইনিভাবে বিক্রি করেন। তখন সেটাকে হার্ডডিক্স লোডিং পাইরেসি বলা হয়।

কম্পিউটার রিসেলিং এর দোকানে এই ধরনের পাইরেসি হয়ে থাকে। অনেক কম্পিউটার কে তারা নিজেদের অজান্তেই এইসব পাইরেটেড সফটওয়্যার কিনে থাকেন।

কাউন্টার ফেইটিং

যখন কোন সফটওয়্যার প্রোগ্রাম অবৈধভাবে নকল করা হয় এবং অথেন্টিক সফটওয়্যার বলে বিক্রি করা হয় তখন তাকে কাউন্টার ফেইন্টিং বা জালিয়াতি বলে।

এই জাল সফটওয়্যার গুলো বাজারে অনেক কম দামে বিক্রি করা হয়।

ইন্টারনেট পাইরেসি

যখন কোন সফটওয়্যার কোনোরকম লাইসেন্স ছাড়াই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি বা কেনা হয় তাকে ইন্টারনেট পাইরেসি বলা হয়।

ইন্টারনেট পাইসি peer-to-peer ফাইল শেয়ারিং এর মাধ্যমে হয়ে থাকে যেগুলো বিভিন্ন ব্লগ আকারে দেয়া থাকে।

সফটওয়্যার পাইরেসির ফল

সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিক্রেতা, ক্রেতা এবং প্রস্তুতকারী সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রস্তুতকারী আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন তেমন বিক্রেতা এবং ক্রেতারাও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়।

আসুন এবার দেখে নেওয়া যাক সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে কার কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে-

সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী

সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশেষ করে আর্থিক দিক থেকে কারণ সফটওয়্যার টি ডেভলপ করার জন্য প্রস্তুতকারী সংস্থাটি অনেক টাকা খরচা করে থাকেন। সেই কারণে আপনি যদি কোন সফটওয়্যার ফ্রিতে পেয়ে যান বা খুব কম দামে পেয়ে যান সে ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারী সংস্থা অনেক ক্ষতি হয়।

সফটওয়্যার ব্যবহারকারী

পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীর যে কোনো সমস্যা হয় না তা নয় । সেই সফটওয়্যার এর যদি কোন আপডেট আছে বা কোন নতুন ফিচার আসে সেগুলো আপনি পাইরেটেড সফটওয়্যার পাবেন না। এছাড়া সফটওয়্যার রিলেটেড কোন সমস্যা হলে তার সমাধান প্রস্তুতকারী সংস্থা আপনাকে করবে না যদি আপনি পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। পাইরেটেড সফটওয়্যার এর বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস থাকতে পারে যা আপনার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

লাইসেন্স ছাড়া এই সমস্ত সফটওয়্যার গুলি কোন ডকুমেন্ট থাকেনা। এছাড়া যেহেতু লাইসেন্সহীন সফটওয়্যার ব্যবহার করা আইন সম্মত নয় সেই জন্য আপনি বিভিন্ন আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

সরকার

আপনি যদি পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে সরকার কোনরকম ট্যাক্স বা GST আদায় করতে পারে না ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সেই জন্য আপনি যদি জিএসটি দিয়ে কোন সফটওয়্যার কেনেন আপনি পরোক্ষভাবে দেশের উন্নয়নের সহায়তা করছেন। তাই আপনার যদি সামর্থ্য থাকে সর্বদা জেনুইন সফটওয়্যার কিনুন।

বিশ্ব অর্থনীতি

সফটওয়্যার পাইরেসি ফলে বিশ্বের অর্থনীতি তেও নেগেটিভ প্রভাব পড়ে। এমন অনেক সফটওয়্যার আছে যা সারা বিশ্বে ব্যবহার করা হয় সেই সমস্ত সফটওয়্যার গুলো যদি পাইরেটেড হতে থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠান বা প্রস্তুতকারী সহ দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সফটওয়্যার পাইরেসির বিপদ

সফটওয়্যার পাইরেসি করে অনেক অর্থোপার্জন করা গেলেও এটি একটি বিপদজনক কাজ কারণ এই কাজে বিভিন্ন আইনগত সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারেন আপনি।

১. সফটওয়্যারটি সবসময় ঠিকমত কাজ করেনা।

২. নকল সফটওয়্যার গুলিতে আপনি কোন কাস্টমার সাপোর্ট পাবেন না তাছাড়া কোনরকম আপডেট প্রিলোডেড যে ট্রেনিং গুলো থাকে তার কোন এক্সেস নাও পেতে পারেন।

৩. পাইরেটেড সফটওয়্যার কোনরকম গ্যারান্টি ওয়ারেন্টি থাকে না।

৪. এইসব বেআইনি সফটওয়্যার গুলো আপনার কম্পিউটারের গতিকে স্লো করে দিতে পারে।

৫. নকল সফটওয়ারের সাথে বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার এবং অ্যাড ওয়ার্ আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল হয়ে যায় আপনার কম্পিউটারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

৬. বেআইনিভাবে আপনি কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করলে কঁপিরাইট আইন ভাঙার কারণে আপনি বিভিন্ন ধরনের আইনি সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারেন।

সফটওয়্যার পাইরেসি প্রতিরোধের উপায়

কপি প্রটেক্ট করা

সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী সংস্থা তাদের সফটওয়্যার যাতে কেউ কপি করতে না তার জন্য প্রটেক্ট করে দিতে পারে। বিভিন্ন এন্টি পাইরেসি সফটওয়্যার ব্যবহার এবং হার্ডওয়ার লক কী এই ধরনের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে পাইরেসি প্রতিরোধ করতে পারে।

সফটওয়্যার অথেন্টিকেশন এবং এক্টিভেশন

সফটওয়্যারটি অরিজিনাল কিনা সেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সফটওয়ারের অথেন্টিকেশন এবং এক্টিভেশন এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যেতে পারে।

গোপনীয়তা অবলম্বন করা

সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি সফটওয়্যার তৈরির সময় যথেষ্ট গোপনীয়তা অবলম্বন করা উচিত জাতীয় তাদের কোন প্রোগ্রাম বা কোড কেউ কপি করতে না পারে।

আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া

আইন সঙ্গত ব্যবস্থা নিয়েও প্রস্তুতকারক সংস্থা গুলি অধিকার রক্ষার জন্য কপিরাইট বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট অনুযায়ী সফটওয়্যার পাইরেসির জন্য কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে। এছাড়া সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী সংস্থা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে সফটওয়্যার পাইরেসি বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন।

প্রস্তুতকারীকে রিপোর্ট করা

কেউ যদি পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে অথবা বিক্রি করে তাহলে যথাশীঘ্র সম্ভব প্রস্তুতকারী সংস্থাকে খবর দিন যে তাদের সফটওয়্যার বিনা অনুমতিতে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করেও সফটওয়্যার পাইরেসির বিরুদ্ধে আপনি প্রতিরোধ করতে পারেন।

সচেতনতা বৃদ্ধি করা

সফটওয়্যার পাইরেসি করা মানে এক প্রকার চুরি করারই সমান। পাইরেসি আসলে কি সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যথেষ্ট সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তাই পাইরেসি হলে কি কি ক্ষতি হতে পারে সেই সম্পর্কে সকলকে বোঝানো যাতে তারা পাইরেটেড সফটওয়্যার এর পরিবর্তে জেনুইন এবং অরিজিনাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে।

উপসংহার

আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন সফটওয়্যার পাইরেসি আসলে কি এবং কিভাবে এই সফটওয়্যার পাইরেসি সকলের ক্ষতি করতে পারে। এই বিষয়ে যদি কোনরকম সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।

এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। যাতে তারাও এ বিষয়ে সচেতন হতে পারে।

FAQ.

প্রশ্ন:পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা কি আইনত অপরাধ?

উত্তর: হ্যাঁ,পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা আইনত অপরাধ।

প্রশ্ন:পাইরেটড সফটওয়ার এবং অরিজিনাল সফটওয়্যার এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

উত্তর: পাইরেটেড সফটওয়্যার এ বিভিন্ন প্রকার bug থাকতে পারে এবং বিভিন্ন প্রকার ম্যালওয়্যার থাকতে পারে যা আপনার কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু অরিজিনাল সফটওয়্যারকোনো প্রকার ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস থাকে না। এছাড়া বিস্তারিত জানবার জন্য উপরের পোস্টটি পড়ুন।

প্রশ্ন:পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে কম্পিউটারের কি কোন ক্ষতি হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে আপনার কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

প্রশ্ন:পাইরেটেড সফটওয়ার কত প্রকার?

উত্তর: সাধারণত ৫ প্রকারের সফটওয়্যার পাইরেসি বেশি হতে দেখা যায়।

প্রশ্ন:সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে প্রতিষ্ঠান গুলির কি কোনো ক্ষতি হয়?

উত্তর: software পাইরেসির ফলে প্রতিষ্ঠানগুলির আর্থিক দিক থেকে বিরাট ক্ষতি হয়। কারণ একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণ গবেষণা এবং অর্থের প্রয়োজন হয় যা যদি ফ্রিতে পাওয়া যায় তাহলে কেউই পয়সা দিয়ে আর কিনবে না।

আপনার জন্য আরো

1.উইন্ডোস কম্পিউটারের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সেটিংগুলো চালু করুন

2.কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর 10 টি সুপার হট টিপস

3.ফলিনা কি? Follina থেকে বাঁচতে windows ব্যবহারকারীদের কি করা উচিত?

4.আপনার ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত কিনা কিভাবে জানবেন ?

Leave a Comment