আশ্বিনের শারদ প্রাতে কাশফুলের বনে হাওয়া লেগে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। রোদের ঝিলিক শরতের আকাশ শিউলি ফুলের গন্ধ মা আসছে দোলায় আবার দরজা কেন বন্ধ।। চারিদিকে পুজোর আভাস। নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা পেঁজা পেঁজা তুলোর মেঘ। আজ মহালয়া আজকের দিন থেকেই দূর্গা পুজোর সূচনা হয়। আজ মাতৃপক্ষের শুরু আর পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে। কথায় আছে যে মহালয়ার দিনে দেবতা আর অসুর দের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেঁধেছিল।
পুরাণ মতে, ব্রহ্মহার বরে মহিষাসুর অমরত্ব লাভ করেছিলেন। শুধুমাত্র কোনও এক নারীশক্তির হাতে তার পরাজয় নিশ্চিত ছিল। সমগ্র দেবতারা যখন অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ওঠেন, তখন ত্রিশক্তি অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর একত্রিত হয়ে তাদের প্রবল শক্তি প্রদান করে সৃষ্টি করেন নারীশক্তির। তিনিই হলেন জগৎ জননী মহামায়া দেবী দূর্গা। সমগ্র দেবতাগণ তাদের নিজ নিজ শক্তি প্রদান করে দেবী দুর্গাকে আরোও শক্তিশালী করে তোলেন। দেবী দূর্গা দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন। ফলে অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির জয় হয়। তাই এই দিনটি মহালয়া হিসেবে পালন করা হয়।
মহালয়ার তাৎপর্য
সবদিক থেকে বিচার বিবেচনা করলে দেখা যায় যে মহালয়ার দিনটি হল তর্পনের দিন বা পিতৃপক্ষের শেষ দিন। এই দিনটিতে অনেকেই তাদের পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গঙ্গায় কিংবা নদীতে তর্পন করে থাকেন।পূর্বপুরুষদের তৃপ্ত করার জন্য জল এবং তিল দান করা হয়। সাধারণত মৃত পূর্বপুরুষদের জল দান করাকে তর্পন বলা হয়। তবে শুধুমাত্র মহালয়ার দিন নয় মহালয়ার ১৪ দিন আগে থেকেই এই তর্পনের রীতি শুরু হয়ে যায়।
মহালয়ার দিন এই তর্পনের মধ্যে দিয়েই পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে। তাই মহালয়ের দিন থেকেই দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে যায়। এই কারণেই মহালয়ার দিনটি বিশেষভাবেগুরুত্বপূর্ণ। আর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই দিনটিতে রীতি নিয়ম মেনে দেবী দুর্গার চক্ষুদান।
তর্পন হল একটি দার্শনিক ভাবনার প্রতীকী রূপ। মহালয়া শব্দটির অর্থ হল মহান আলয় বা আশ্রম। অর্থাৎ দেবী দুর্গাই হলেন সেই মহান আলয়। এই দিনে কোনও মৃত ব্যাক্তির শ্রাদ্ধ শান্তি করলে, তার আত্মা প্রশান্তি লাভ করে এবং সেই আত্মা মুক্তি লাভে সক্ষম হয়। মানা হয় যে পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ শান্তি ও তর্পন করলে পূর্ব পুরুষেরা সন্তুষ্ট হন এবং আশীর্বাদ করেন। তাদের আশীর্বাদে জীবনের অনেক বাধা বিপত্তি দূর হয়ে যায়। এমনকি জীবনের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। পিতৃপক্ষ এবং তর্পন রীতির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, এজন্যেই দেবীপক্ষের সূচনার আগে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পন করা হয়।