অনেক সময় আমাদের সাথে এরকম হয় যে একটি ভালো নতুন স্মার্টফোন কেনার ইচ্ছে হলেও দাম বেশি হওয়ার কারণে আমরা সেটা কিনে উঠতে পারি না। তাই স্মার্টফোন ব্যবহার করার ইচ্ছে পূরণের জন্য আমরা একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। পুরোনো স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে তেমন কিছু সমস্যা থাকে না। কিন্তু আপনি যদি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কেনেন তাহলে অবশ্যই কিছু বিষয়ের ওপর আপনাকে নজর রাখতে হবে, তা নাহলে এমনও হতে পারে যে আপনি অজান্তেই একটি খারাপ ফোন কিনে ফেললেন। সুতরাং পুরোনো স্মার্টফোন কেনার আগে ফোনটির বিষয়ে অবশ্যই যাচাই করে নেবেন। নাহলে আপনি নানা রকম সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই আপনি যদি ভেবে থাকেন যে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কিনবেন তাহলে কেনার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন। এই পোস্টটিতে পুরোনো ফোন কেনার আগে কি কি করা উচিত সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
চলুন তাহলে সেই বিষয়গুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক –
আপনি যার কাছ থেকে ফোনটি কিনছেন তার সাথে ফোনে কথা না বলে সামনাসামনি দেখা করুন
বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলোতে পুরোনো সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার মানুষের অভাব নেই। এখন এরকম অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে আপনারা পুরোনো সেকেন্ড স্মার্টফোন কিনতে পারবেন। এছাড়াও আপনারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন পেয়ে যেতে পারবেন। আপনি যদি একটি ব্যবহার করা পুরোনো ফোন কিনতে চান তাহলে যে ব্যাক্তির থেকে ফোনটি কিনছেন চেষ্টা করবেন তার সাথে সামনাসামনি দেখা করে ফোনটি নেওয়ার। আর পারলে সেই ব্যাক্তির কাছ থেকে ফোনটির বিষয়ে বেসিক কিছু ইনফরমেশন জেনে নেবেন।
কাগজপত্র যাচাই করে নেবেন
আপনি যখন কোনো সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কিনবেন তখন অবশ্যই তার বিল ও রিটেল বক্সটি যাচাই নেবেন। আর আপনি যে ব্যাক্তির কাছ থেকে ফোনটি কিনছেন সে যদি বলে যে তার কাছে বিল বা বক্স কিছুই নেই সে সেটা হারিয়ে ফেলেছে তাহলে আপনি সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও করে প্রমান স্বরূপ নিজের কাছে রাখতে পারেন। আর আপনি যখন কোনো অনলাইন ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কিনবেন, তখন সেখান থেকে আপনি একটি E – Invoice পেয়ে যাবেন। স্মার্টফোনটি কেনার পর আপনি যেই বিল বা বক্সটি পেয়েছেন তাতে দেওয়া থাকা IMEI নম্বর এবং ফোনের IMEI নম্বর অবশ্যই চেক করে দেখে নেবেন। ফোনের IMEI নম্বরটি জানার জন্য আপনি সেই ফোনের ডায়াল অপশনে গিয়ে *#06# এই নম্বরটি ডায়াল করে জেনে নিতে পারেন। আর হ্যা মনে রাখবেন যে ডুয়াল সিমের স্মার্টফোন গুলিতে ২ টি IMEI নম্বর থাকে। আপনি এই দুটি নম্বরই চেক করে দেখে নেবেন।
ফোনের ব্যাটারির বিষয়ে যাচাই করে নেবেন
অনেক সময় আমরা যখন কোনো সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কিনি তখন আমরা ফোনটিকে বাইরে থেকে দেখেই পছন্দ করে ফেলি, কিন্তু ফোনটি ভিতর থেকে কেমন সেটা যাচাই করে দেখি না। পুরোনো ফোন কেনার সময় ফোনের ব্যাটারি কেমন সেটা অবশ্যই জেনে নেবেন। যদি ফোনের ব্যাটারির মধ্যে কোনো রকম সমস্যা থাকে সেটা আপনি সাথে সাথে বুঝতে পারবেন না। সুতরাং ফোনটি কেনার পর আপনি যখন কিছু সময় ধরে ফোনটি ব্যবহার করবেন তখন আপনি বুঝতে পারবেন যে ফোনের ব্যাটারিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা। তাই সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনটি কেনার পর কিছু সময়ের জন্য ফোনটি নিয়ে ব্যবহার করে দেখুন গান শুনুন, ভিডিও দেখুন, গেম খেলুন যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে ফোনের ব্যাটারি ঠিক আছে কিনা।
ফোনের পোর্টগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা দেখে নেবেন।
আপনারা যখন কোনো সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন অর্ধেক দামের মধ্যে পেয়ে যান, তখন কোনো রকম ভাবনা চিন্তা না করেই ফোনটি কিনে ফেলেন। আদেও ফোনটির সব পোর্ট গুলো ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা দেখেন না, বাইরে থেকে ফোনটির সৌন্দর্য দেখেই ফোনটি নিয়ে ফেলেন। এমন অনেক ব্যাক্তিই আছে যারা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনটি কেনার সময় ফোনের স্পিকার, হেডফোন, চার্জার, ক্যামেরা লেন্সের মতো জিনিস গুলোর ওপর নজর দেয় না। যখনই আপনারা একটি পুরোনো সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কিনবেন তখন অবশ্যই এই সমস্ত জিনিস গুলো ভালো ভাবে চেক করে দেখে নেবেন। এইসব পোর্ট গুলো চেক করার সময় যদি ফোন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বুঝে নেবেন ফোনের মধ্যে কোনো রকম অসুবিধা আছে। তাই সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনটি কেনার আগে অবশ্যই ফোনের স্পিকার, মাইক, ইউএসবি পোর্ট এবং ক্যামেরা ভালো করে চেক করে দেখে নেবেন। প্রয়োজন হলে ক্যামেরা থেকে ফটো তুলে দেখে নেবেন যে ক্যামেরার লেন্স ঠিক আছে কিনা।
ফোনের মধ্যে কোনো রকম ড্যামেজ আছে কিনা চেক করে নেবেন।
যখন আপনারা পুরোনো ফোন কিনবেন তখন অবশ্যই ফোনটি ভালো করে দেখে নেবেন তাতে কোনো ড্যামেজ আছে কিনা। অনেক সময় ফোন কেনার আনন্দে আপনার ফোনটির physical parts / body ভালো করে দেখে নেন না। ফোনটি কেনার পরে আপনাদের নানা রকম সমস্যা চোখে পরে। আপনারা এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন যে যেই ফোনটি আপনি কিনছেন সেটি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন। অন্য ব্যাক্তি সেই ফোনটি ব্যবহার করেছে, হতে পারে ফোনটি কোনো সময় তার হাত থেকে পরে গিয়েছিলো বা ফোনটিতে স্ক্র্যাচও থাকতে পারে। তাই সেই ব্যাক্তির কাছ থেকে যখন ফোনটি কিনবেন তাতে যদি কভার লাগানো থাকে তাহলে কভারটি খুলে ভালো করে দেখে নেবেন ফোনে কোনো রকম ড্যামেজ আছে কিনা।
সফটওয়্যার চেক করুন।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও আপনারা বাইরে থেকে ফোনটি দেখে হার্ডওয়্যার এর কোনো সমস্যা থাকলে বুঝতে পারেন কিন্তু সফটওয়্যার জনিত কোনো সমস্যা থাকলে সেটা আপনাদের পক্ষে বোঝা অতোটা সহজ হবে না। যেমন ধরুন – এন্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে সেট রুট করা থাকলে ওয়ারেন্টি পাবেন কিনা সেটা জেনে নেবেন, আর আইফোনের ক্ষেত্রে আইক্লাউড লক করা আছে কিনা সেটা দেখে নেবেন। আপনারা যদি রুট করা স্মার্টফোন কিনে থাকেন তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যদি ওয়ারেন্টি চান তাহলে রুট করা আছে কিনা সেটা দেখে নেবেন। আর হ্যা যে ব্যাক্তির কাছ থেকে ফোনটি কিনছেন তার কাছ থেকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পাসওয়ার্ড গুলি জেনে নেবেন। সব থেকে বেশি ভালো হয় যদি ফ্যাক্টরি রিসেট করা অবস্থায় ফোনটি কেনেন।
সফটওয়্যার চেক করুন।
অনেকসময় আপনারা যখন একটি পুরোনো স্মার্টফোন কেনেন সেটা বাইরে থেকে দেখে ভালো মনে হলেও ফোনটি পরে যাওয়ার কারণে তার ভিতরে বিভিন্ন রকম সমস্যা থাকতে পারে যেমন – রেডিও, ক্যামের, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ এগুলি ঠিকঠাক কাজ নাও করতে পারে। তাই এগুলি ভালো করে চেক করে দেখে নেওয়া উচিত। এই সমস্ত বিষয় গুলো চেক করার জন্য প্লে স্টোরে হার্ডওয়্যার টেস্ট নামে আপনারা অনেক app পেয়ে যাবেন। তাই আপনারা যখন একটি সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কিনবেন ওপরে যেই বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। এছাড়াও যদি আপনাদের কোনো রকম জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনার জন্য আরো
1.স্মার্টফোন কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন।
2.মোবাইল হ্যাং করলে তা কিভাবে ঠিক করবেন
3.স্মার্টফোন কেনার পর যে নিয়মগুলো অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা জেনে নিন
4.ফোনের ব্যাটারিতে বিস্ফোরণ কেন হয় ? এই দুর্ঘটনা থেকে কীভাবে নিজেকে বাঁচাবেন ?